শকুন ও শৃগালের দর্শন




🚩 #শকুন_ও_শৃগালের_দর্শন 🚩

🌻 একদিন একটি গ্রামে এক বালক মারা গেল । স্বভাবতই তাকে ঘিরে আত্মীয়-স্বজনেরা ভীষণ কান্না করতে লাগল । তারপর তারা যখন বালকের মৃতদেহটি সৎকারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই এক শৃগাল এসে মধুর স্বরে বালকের প্রতি উপস্থিত সবার ভালবাসার প্রসংশা করতে লাগল । এরপর সে বালকের বিস্ময়কর সব গুণাবলীর কথা শোনাতে লাগল এবং শেষে সে মৃতদেহ পোড়ানোর পূর্বে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালকের মধুর স্মৃতির দ্বারা সবাইকে সিক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করল । আর বলল আপনারা কালকে এই মৃতদেহ পুড়াবেন এখন সবাই বাসায় চলে যান ।

🌻 ইতিমধ্যে, উপর থেকে সবকিছু দেখে একটি শকুন আকষ্মিকভাবে সেখানে উড়ে নামল । নেমেই শৃগালের কথাগুলোকে সে দার্শনিকভাবে খন্ডন করতে লাগল । শকুন ব্যাখ্যা করতে লাগল যে, যাকে আসলে ভালবাসা যায়, সেই আত্মা দেহের ভিতরে থাকে এবং ইতিমধ্যে সে আত্মা দেহ থেকে চলে গেছে । তাই এই মৃতদেহের জন্য শোক করা শুধু ভাবপ্রবণতা ও মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয় । এজন্যে শকুনের পরামর্শ হচ্ছে, দেহ ও আত্মাকে পৃথক জ্ঞান করে সবার উচিত আর শোক না করে এ স্থান ত্যাগ করে চলে যাওয়া । এভাবে শকুনটি শৃগালের যুক্তি খন্ডন করল আর  আত্মীয়-স্বজনদের চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিল ।

🌻 আসলে এখানে দুজনের উদ্দেশ্য এক । শৃগালটি চেয়েছিল বালকের প্রশংসা করে রাত করিয়ে দেওয়া আর তাদের এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, যেহেতু শৃগাল নিশাচার, সেহেতু রাতে এই শৃগালটি মৃতদেহটিকে খেতে পারে । আর শকুনটিও চেয়েছিল এই মৃতদেহটি ভোগ করতে তাই সে একইসাথে দুটি কাজ করেছে এক শৃগালকে মৃত দেহটি ভোগ না করতে দেওয়া আর শৃগালের যুক্তি খন্ডন করে আত্মীয়-স্বজনদের তাড়িয়ে দেওয়া, যাতে শকুনটি এখনই মৃতদেহটিকে খেতে পারে । 

🌻 ঠিক এই জগতে আমরা দেখি, কিছু স্বার্থবাদী লোক তাঁর নিজের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করার জন্য একেক ধরনের মনগড়া দর্শন দিয়ে থাকে । আর সেই মনগড়া ব্যাখ্যা পড়ে সহজ সরল লোক তাদের পিছন পিছন ছুটতে থাকে । কিন্তু তারা বুঝে না তাদের ভিতরে যে ভক্তি নামক সম্পদ আছে, সেই সম্পদ এই ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যাকারী দার্শনিকেরা লুটে নেয়, তাই এদের এখানে শৃগাল আর শকুনের সাথে তুলনা করা হয়েছে । তাই আমাদের সাবধান থাকা উচিত এই ধরনের শৃগাল ও শকুনের ন্যায় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকা । যারা উপরে ভক্তিমূলক দার্শনিক কথা বলবে কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোগ করা। 

🌻 তাই ভগবান আমাদের বৈদিক শাস্ত্রগুলো দিয়েছে যেগুলো আমরা সদ্‌গুরুদেবের সান্নিধ্যে থেকে পূর্বতন আচার্য্যের কাছ থেকে শুনে বৈদিক শাস্ত্র সিধান্তগুলো উপনিত হতে পারি । এই ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যা আমাদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে আর সঠিক শাস্ত্র সিধান্ত জনগনের মাঝে তুলে ধরতে হবে যাতে সবার পারমার্থিক প্রগতি উন্নত হয় আর সকলের সমস্যার সমাধান হয়।  আর সবাই সুখে, শান্তিতে ও আনন্দে থাকতে পারে।

0 Comments