অষ্টসিদ্ধি




#প্রশ্নঃ #অষ্টসিদ্ধি কি ?

#উত্তরঃ ব্রহ্মলােক, ধ্রুবলােক ইত্যাদি উচ্চতর গ্রহের অধিবাসীরা সকলে অষ্টসিদ্ধি লাভ করেছেন। তাঁরা ইচ্ছা অনুসারে অণুর মতাে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করতে পারেন—এরকম সিদ্ধিকে বলে #অণিমা। ইচ্ছামতাে হালকা জলের উপর হেঁটে যেতে বা শূন্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন—এরকম সিদ্ধিকে বলে #লঘিমা। যে কোনও স্থান থেকে যা ইচ্ছা তাই প্রাপ্ত হতে পারেন—এরকম সিদ্ধিকে বলে #প্রাপ্তি। অত্যন্ত ভারী হতে পারেন, এই সিদ্ধিকে বলে #গরিমা। কোনও স্থানে কিছু অদ্ভুত জিনিষ সৃষ্টি করতে পারেন বা ইচ্ছানুসারে কোন জিনিস ধ্বংস করতে পারেন। এরকম সিদ্ধিকে বলে #ঈশিতা। জড় উপাদান গুলােকে কেবল ইচ্ছা অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। একে বলে বশিতা। কোনও বাসনা চরিতার্থ করতে এবং কখনও নিরাশ না হওয়ার যে সিদ্ধি তাকে বলে প্রাকাম্য। ইচ্ছামতাে বা খামখেয়ালীভাবে যে কোনও জড়রূপ ধারণ করতে পারেন। এই সিদ্ধিকে বলে কামাবসায়িতা।
উচ্চতর গ্রহের অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই এ সমস্ত সিদ্ধির অধিকারী। এজন্য তাদের কোনও অনুশীলন বা কোনরকম অলৌকিক পদ্ধতি শিখতে হয় না। তারা ইচ্ছা করলে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে কোনরকম আকাশযান ছাড়াই নিমেষের মধ্যেও ভ্রমণ করতে পারেন।
পৃথিবীতে দৈবক্রমে এই সিদ্ধিগুলির মাত্র একটিও কিংবা একটু-আধটুও যদি কেউ লাভ করতে পারে তবে সেই ব্যক্তিকে মূর্খেরা ভগবান বলেই মনে করে। যেহেতু পৃথিবীর অধিবাসীদের কাছে এই সিদ্ধিগুলি স্বাভাবিক নয়। তাই কেউ সিদ্ধি প্রদর্শন করলেই অত্যন্ত মহান ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলে লােকে তাকে মনে করে থাকে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মায়াপুরে শ্রীধর ঠাকুরকে অষ্টসিদ্ধি প্রদান করতে চাইছিলেন। কিন্তু শ্রীধর ঠাকুর মনে করেছিলেন, এই সমস্ত সিদ্ধি জড় ব্রহ্মাণ্ডে লাভ-পূজা প্রতিষ্ঠা আনবে আর ভােগসুখ ইন্দ্রিয় তর্পণের পক্ষে ভালাে হবে সেই জন্যে ভগবানের প্রতি নিষ্ঠা প্রীতি ও সেবার জন্য মানসিকতাও থাকবে না। তাই তিনি সিদ্ধি নিতে চাইলেন না। তিনি মহাপ্রভুর নিত্য সেবায় যুক্ত থাকতে চাইলেন। বালেশ্বরের রেমুণাতে একজন লােক অন্যদের ভেলকি দেখানাের জন্য একটা ভাঙ্গা গাছের ডাল সহ শূন্যে উড়ে বেড়াচ্ছিল। লােকেরা হৈহৈ করছিল, বিস্ময়ের চক্ষুতে তাকিয়ে ছিল। মহাপ্রভুর ভক্ত রসিকানন্দকে লােকে সেই দৃশ্য দেখাবার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। রসিকানন্দ মুখের দাঁতনটিতে দাঁড়িয়ে ক্ষীরছোরা গােপীনাথের মন্দিরের চারদিকে পরিক্রমা করলেন, মাটি থেকে এক হাত উঁচু হয়ে। তারপর বললেন, ওই সব সিদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানাের কোনও প্রয়ােজন নেই। শূন্যে ঘুরে বেড়ানােটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। একমাত্র কৃষ্ণনাম করাটাই জীবনের উদ্দেশ্য। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে—
ভুক্তি-মুক্তি-সিদ্ধিকামী সকলেই অশান্ত।
কৃষ্ণভক্ত নিষ্কাম অতএব শান্ত॥
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়েছেন, জীবনের পরম সিদ্ধি হচ্ছে কৃষ্ণভক্তি লাভ করা।

0 Comments